Investing Insights: স্টক মার্কেটে নবাগতদের জন্য সাপ্তাহিক প্রশ্নোত্তর – পর্ব- ১১

0

প্রিয় পাঠকবৃন্দ, আমরা আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে আমাদের টিম MoneyWiseMind.com একটি নতুন বিভাগ চালু করেছে“Investing Insights: Weekly Q&A for Stock Market Newbies”যার উদ্দেশ্য হল নতুনদের মাঝে শেয়ার বাজারের প্রাথমিক জ্ঞান ছড়িয়ে দেওয়া।



এটি আপনার নির্ভরযোগ্য রিসোর্স, যা শেয়ার বাজারকে একদম গোড়া থেকে সহজভাবে বোঝাতে সহায়তা করবে। প্রতিদিন আমরা ১০টি গুরুত্বসহকারে বাছাই করা প্রশ্ন তার উত্তর উপস্থাপন করব, যেখানে শেয়ার বাজারের গুরুত্বপূর্ণ ধারণা, কৌশল পরিভাষা অন্তর্ভুক্ত থাকবে। আপনি যদি সদ্য বাজারে প্রবেশ করে থাকেন, অথবা শেয়ার বাজারে যাত্রা শুরু করতে চান, কিংবা আপনার মৌলিক জ্ঞানকে আরও শক্তিশালী করতে চানআমাদের এই সাপ্তাহিক পোস্ট আপনার জন্য একটি গাইডের মতো কাজ করবে। এটি আপনাকে বিনিয়োগের জগৎকে সহজ বোধগম্য করে তুলতে সহায়তা করবে। শুভ কামনা রইল। 

 

 

দিবস ১১: শেয়ার বাজারের প্রাথমিক ধারণা


. স্টক মার্কেটে টেকনিক্যাল অ্যানালিসিস কী?

 

টেকনিক্যাল অ্যানালিসিস হলোএকটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে শেয়ার বা অন্যান্য সিকিউরিটির ভবিষ্যৎ দামের চলাচল বিশ্লেষণ অনুমান করা হয়। এতে মূলত অতীতের বাজার ডেটা, যেমন দাম ট্রেডের পরিমাণ ব্যবহার করা হয়।

 

 ক্যান্ডলস্টিক প্যাটার্ন, চার্ট প্যাটার্ন, টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর এবং ট্রেন্ড লাইনের মাধ্যমে  প্রাইস্ প্যাটার্ন প্রবণতা চিহ্নিত করে ট্রেডাররা সঠিক কেনা-বেচার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

 

. ক্যান্ডলস্টিক চার্ট কী এবং কেন এগুলি গুরুত্বপূর্ণ

 

ক্যান্ডলস্টিক চার্ট হল বিশেষ ধরনের গ্রাফিকাল উপস্থাপনা,যেখানে রঙিন বারগুলির মাধ্যমে একটি সিকিউরিটি বা অ্যাসেটের নির্দিষ্ট সময়ের দামের চলাচল দেখানো হয়। এটি স্টক, পণ্য, মুদ্রা ইত্যাদির জন্য ব্যবহার করা যায়। প্রতিটি ক্যান্ডলস্টিক একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ওপেন, ক্লোজ, সর্বোচ্চ সর্বনিম্ন দাম প্রদর্শন করে।

 

 ক্যান্ডলস্টিক প্যাটার্নগুলি বাজার বিপরীতমুখী হওয়া বা নতুন ট্রেন্ড চিহ্নিত করতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তাই টেকনিক্যাল অ্যানালিসিসে এগুলি খুবই জনপ্রিয়।

 

. টেকনিক্যাল অ্যানালিসিসে সাপোর্ট লেভেল কী?

 

সাপোর্ট লেভেল হল একটিমূল্যের স্তর বা অঞ্চল(level), যেখানে নিচের দিকে চলমান দাম সাময়িকভাবে থেমে যায় এবং চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় আবার উপরের দিকে ফিরে আসে। এটি এমন একটি দামের বিন্দু যেখানে শেয়ারের দাম আর নিচে নামতে চায় না, কারণ সেই জায়গায় কিনতে ইচ্ছুক লোকের সংখ্যা অনেক বেশি থাকে। এটি একটি "মেঝে"(floor) - মতো কাজ করে, যেখানে ক্রেতারা বাজারে প্রবেশ করে এবং দাম আর নিচে নামতে দেয় না।

 

 সাপোর্ট লেভেল টেকনিক্যাল অ্যানালিসিসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা দিয়ে একটি শেয়ারের শক্তিশালী চাহিদার অঞ্চল বোঝা যায়।

 

. রেজিস্ট্যান্স লেভেল কী?

 

রেজিস্ট্যান্স লেভেল হল একটিমূল্যের স্তর বা অঞ্চল, যেখানে উপরের দিকে চলমান দাম সাময়িকভাবে থেমে যায় এবং আরও ওপরে যেতে পারে না অথবা বিপরীত দিকে ঘুরে যায়। এর প্রধান কারণ হল, সেই দামে বিক্রেতাদের সংখ্যা ক্রেতাদের চেয়ে বেশি হয়ে যায়, অর্থাৎ সরবরাহ বা বিক্রির চাপ বেড়ে যায়।

 

 এটি সাপোর্ট লেভেলের ঠিক উল্টো। এই স্তরে পৌঁছানোর পর শেয়ারের দাম আর ওপরে ওঠে না, কারণ বিক্রির চাপ কেনার চাপকে ছাড়িয়ে যায়। রেজিস্ট্যান্স লেভেল টেকনিক্যাল অ্যানালিসিসের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক, যা দিয়ে শেয়ারের শক্তিশালী বিক্রির অঞ্চল বা সরবরাহ জোন (supply zone) চিহ্নিত করা যায়।

 

. টেকনিক্যাল অ্যানালিসিসে ইন্ডিকেটর কী?

 

টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটরগুলিহল গুরুত্বপূর্ণ স্বাধীন টুলস, যা বাজার বিশ্লেষকরা বাজারের প্রবণতা, দামের চলাচল পরিমাণ বুঝতে ব্যবহার করেন। এই ইন্ডিকেটরগুলি পূর্ব-নির্ধারিত লজিকের উপর তৈরি, যা বিপুল পরিমাণ ডেটাকে সহজভাবে উপস্থাপন করে। এর ফলে ট্রেডারদের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া অনেক সহজ হয় এবং তাদের টেকনিক্যাল অ্যানালিসিসের মান বৃদ্ধি পায়।

 

এই ইন্ডিকেটরগুলিরঙিন লাইন হিসেবে চার্টে দেখা যায়। ট্রেডাররা এই ইন্ডিকেটর ব্যবহার করে শেয়ারের ভবিষ্যৎ দামের চলাচল সম্পর্কে ধারণা নেন।

 

৬. মুভিং এভারেজ (MA) কী?

 

মুভিং এভারেজ বা MA হল একটি টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর যা স্টক মার্কেটে ট্রেডাররা একটি স্টক বা সিকিউরিটির টেকনিক্যাল অ্যানালিসিস করার জন্য ব্যবহার করে। এটি মূলত দামের ডেটাকে একটি চলমান গড়ের মাধ্যমে সহজ স্পষ্ট করে তোলে।

 

মুভিং এভারেজ ট্রেডারদের কাছে খুবই জনপ্রিয় একটি ইন্ডিকেটর, যা দেখে তারা স্টকের ট্রেন্ড বুঝতে পারেন এবং সঠিক সময়ে কিনতে বা বিক্রি করার সুযোগ খুঁজে পান। যদি আমরা একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কোনো স্টকের মুভিং এভারেজ বের করতে চাই, তাহলে আমরা সেই সময়ের ক্লোজিং প্রাইসগুলো নেব এবং মোট দিন সংখ্যা দিয়ে ভাগ করব।

 

. সিম্পল মুভিং এভারেজ (SMA) কী?

 

সিম্পল মুভিং এভারেজ হলো একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য একটি স্টকের গড় দাম হিসাব করে সেটি গ্রাফে দেখানো। এটি বের করার জন্য, প্রথমে একটি নির্দিষ্ট সময়ের (যেমন দিন, ১০ দিন) সমস্ত ক্লোজিং প্রাইস যোগ করা হয়, সেই যোগফলকে মোট দিন সংখ্যা দিয়ে ভাগ করা হয়।

 

উদাহরণস্বরূপ, একটি স্টকের দিনের ক্লোজিং প্রাইস ১০,২০,৩০,৪০,৫০ টাকা হয়, তাহলে SMA হবে = (১০+২০+৩০+৪০+৫০) = ১৫০ ÷ = ৩০।

 

মুভিং এভারেজ সাধারণত ট্রেন্ড শনাক্ত করতে, সম্ভাব্য ট্রেন্ড রিভার্সাল বুঝতে এবং কেনা-বেচার সঠিক পয়েন্ট বের করতে ব্যবহৃত হয়।

 

. লিডিং এবং ল্যাগিং ইন্ডিকেটরের মধ্যে পার্থক্য কী?

 

লিডিং ইন্ডিকেটর:

 

এটি এমন একটি ইন্ডিকেটর যা দামের পরিবর্তনের আগে সংকেত দেয়। অর্থাৎ, এটি ভবিষ্যতে কোন নতুন ট্রেন্ড বা রিভার্সাল হতে পারে, তা আগে থেকেই ইঙ্গিত দেয়। উদাহরণ যেমন আরএসআই (RSI) এবং স্টোকাস্টিক অ্যাসিলেটর, যা বাজার বিপরীতমুখী হওয়ার আগেই সংকেত দিতে সাহায্য করে।

 

ল্যাগিং ইন্ডিকেটর:

 

এটি এমন একটি ইন্ডিকেটর যা দামের পরিবর্তনের পরে সংকেত দেয়। অর্থাৎ, ট্রেন্ড বা রিভার্সাল শুরু হওয়ার পরে এটি তা নিশ্চিত করে। এটি মূলত ইতিমধ্যে তৈরি হওয়া ট্রেন্ডকে কনফার্ম করতে ব্যবহৃত হয়। সবচেয়ে জনপ্রিয় ল্যাগিং ইন্ডিকেটর হল মুভিং এভারেজ (MA) এবং MACD এগুলি ভবিষ্যতের পরিবর্তন ভবিষ্যদ্বাণী না করে বরং প্রতিষ্ঠিত ট্রেন্ডের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে।

 

. রিলেটিভ স্ট্রেন্থ ইনডেক্স (RSI) কী?

 

রিলেটিভ স্ট্রেন্থ ইনডেক্স (RSI) হল একটি মোমেন্টাম অসিলেটর যা দামের পরিবর্তনের গতি পরিমাণ পরিমাপ করে। এটি থেকে ১০০ স্কেলে কাজ করে (ডিফল্ট সেটিং) এবং এটি দিয়ে ওভারবট বা ওভারসোল্ড অবস্থা বোঝা যায়। RSI-এর মান ৭০-এর বেশি হলে বুঝতে হবে অ্যাসেটটি ওভারবট (বিক্রির সংকেত), আর RSI ৩০-এর নিচে হলে বুঝবেন অ্যাসেটটি ওভারসোল্ড (কিনবার সংকেত)

 

RSI আসলে একটি মোমেন্টাম ইন্ডিকেটর, যা পরিমাপ করে যে স্টকটির দাম কত দ্রুত বাড়ছে বা কমছে। এর মাধ্যমে ট্রেডাররা স্টকের ওভারবট ওভারসোল্ড অবস্থা সহজেই শনাক্ত করতে পারেন।

 

১০. বোলিঙ্গার ব্যান্ডস কী এবং এটি কিভাবে কাজ করে?

 

বোলিঙ্গার ব্যান্ডস তিনটি লাইন নিয়ে গঠিত: একটি মুভিং এভারেজ (সাধারণত ২০ দিনের) এবং তার উপরে নিচে দুইটি স্ট্যান্ডার্ড ডেভিয়েশন লাইন।

 

 এটি বাজারের স্থিরতা পরিমাপ করে এবং ওভারবট ওভারসোল্ড অবস্থা চিহ্নিত করতে সাহায্য করে। যখন দাম উপরের ব্যান্ডের কাছাকাছি পৌঁছায়, তখন অ্যাসেটটি ওভারবট বলে ধরা হয় (অর্থাৎ দাম বেড়ে গেছে), আর যখন দাম নিচের ব্যান্ডের কাছাকাছি আসে, তখন অ্যাসেটটি ওভারসোল্ড (অর্থাৎ দাম কমে গেছে) বলে মনে করা হয়।

 

স্টক মার্কেটের বেসিক নিয়ে আপনার মনে যদি আরও কোনো প্রশ্ন থাকে বা কোনো কিছু পরিষ্কারভাবে বুঝতে চান, তাহলে দয়া করে আপনার প্রশ্নটি কমেন্ট বক্সে লিখুন। আমরা সেটি বুঝতে আপনাকে যথাসম্ভব সাহায্য করার চেষ্টা করব।


ডিসক্লেমার: এই ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য শুধুমাত্র শিক্ষামূলক এবং সাধারণ তথ্যের জন্য প্রদান করা হয়েছে। এটি কোনো আর্থিক পরামর্শ নয়। যেকোনো আর্থিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে একজন অনুমোদিত আর্থিক পরামর্শদাতার সঙ্গে পরামর্শ করুন।


Please follow our WhatsApp channel for better learning from the given link

https://whatsapp.com/channel/0029VbB5B2GF1YlOLy8Aug17

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)