প্রিয় পাঠকবৃন্দ, আমরা আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে আমাদের টিম MoneyWiseMind.com একটি নতুন বিভাগ চালু করেছে – “Investing Insights: Weekly Q&A for Stock
Market Newbies”– যার উদ্দেশ্য হল নতুনদের মাঝে শেয়ার বাজারের প্রাথমিক জ্ঞান ছড়িয়ে দেওয়া।
এটি আপনার নির্ভরযোগ্য রিসোর্স, যা শেয়ার বাজারকে একদম গোড়া থেকে সহজভাবে বোঝাতে সহায়তা করবে। প্রতিদিন আমরা ১০টি গুরুত্বসহকারে বাছাই করা প্রশ্ন ও তার উত্তর উপস্থাপন করব, যেখানে শেয়ার বাজারের গুরুত্বপূর্ণ ধারণা, কৌশল ও পরিভাষা অন্তর্ভুক্ত থাকবে। আপনি যদি সদ্য বাজারে প্রবেশ করে থাকেন, অথবা শেয়ার বাজারে যাত্রা শুরু করতে চান, কিংবা আপনার মৌলিক জ্ঞানকে আরও শক্তিশালী করতে চান — আমাদের এই সাপ্তাহিক পোস্ট আপনার জন্য একটি গাইডের মতো কাজ করবে। এটি আপনাকে বিনিয়োগের জগৎকে সহজ ও বোধগম্য করে তুলতে সহায়তা করবে। শুভ কামনা রইল।
দিবস ৫: শেয়ার বাজারের প্রাথমিক ধারণা
ক্যাপিটাল গেইন (Capital Gain) কী?
ক্যাপিটাল গেইন হলো এমন এক ধরনের লাভ যা কোনো সম্পদ (যেমন বাড়ির জিনিসপত্র, আসবাবপত্র, শেয়ার, বন্ড ইত্যাদি) বিক্রি করে অর্জন করা যায়।
যখন বিক্রয়মূল্য ক্রয়মূল্যের থেকে বেশি হয়, তখন যে অতিরিক্ত অর্থ পাওয়া যায় সেটাই ক্যাপিটাল গেইন।
উদাহরণ: জোজো 100টি শেয়ার প্রতি শেয়ার 10 টাকা দরে কিনলো। পরে সে সেই শেয়ারগুলো 20 টাকা দরে বিক্রি করলো।
মোট বিক্রয়মূল্য = 100 × 20 = 2000 টাকা
মোট ক্রয়মূল্য = 100 × 10 = 1000 টাকা
ক্যাপিটাল গেইন = 2000 - 1000
= 1000 টাকা
ক্যাপিটাল গেইন দুই ধরনের হতে পারে:
শর্ট-টার্ম (এক বছরের কম সময়ের জন্য ধরে রাখা)
লং-টার্ম (এক বছরের বেশি সময় ধরে রাখা)
এবং এর উপর ভিন্ন ভিন্ন কর প্রযোজ্য হয়।
ক্যাপিটাল লস (Capital Loss) কী?
যখন কোনো সম্পদ বিক্রি করে তার ক্রয়মূল্যের চেয়ে কম দাম পাওয়া যায়, তখন সেটাকে ক্যাপিটাল লস বলা হয়।
উদাহরণ: মিস্টার স্যামুয়েল 100টি শেয়ার 20 টাকা দরে কিনলেন। পরে তিনি সেগুলো 15 টাকা দরে বিক্রি করলেন।
মোট ক্রয়মূল্য = 100 × 20 = 2000 টাকা
মোট বিক্রয়মূল্য = 100 × 15 = 1500 টাকা
ক্যাপিটাল লস = 2000 - 1500
= 500 টাকা
ক্যাপিটাল লস ভবিষ্যতে ট্যাক্স কমানোর জন্য ক্যাপিটাল গেইন-এর সাথে অ্যাডজাস্ট করা যায়।
স্টক ও বন্ডের মধ্যে পার্থক্য কী?
স্টক (Stock): কোনো কোম্পানির মালিকানার অংশ বোঝায়। এতে লাভ (Capital Gain) ও লভ্যাংশ (Dividend) পাওয়া যায়।
বন্ড (Bond): বন্ড হলো এক ধরনের ঋণপত্র। কোম্পানি বা সরকার বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে টাকা ধার নেয় এবং নির্দিষ্ট সময় পর সুদসহ সেই টাকা ফেরত দেয়।
সহজভাবে বললে, স্টক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ কিন্তু বেশি রিটার্ন দিতে পারে, আর বন্ড তুলনামূলক নিরাপদ হলেও রিটার্ন কম।
টাইম ভ্যালু অব মানি (Time Value of
Money) কী?
এই ধারণাটি বলে যে, আজকের 100 টাকা ভবিষ্যতের 100 টাকার চেয়ে বেশি মূল্যবান। কারণ আজকের টাকাকে বিনিয়োগ করলে তা থেকে সুদ বা লাভ পাওয়া যায়, কিন্তু ভবিষ্যতে সেই টাকার ক্রয়ক্ষমতা মুদ্রাস্ফীতির কারণে কমে যেতে পারে।
কম্পাউন্ডিং (Compounding) কী?
কম্পাউন্ডিং মানে হলো আপনার আসল বিনিয়োগের ওপর শুধু লাভ পাওয়া নয়, সেই লাভ থেকেও আবার নতুন লাভ পাওয়া।
এভাবেই সময়ের সাথে সাথে বিনিয়োগের টাকা অনেক বড় অঙ্কে পরিণত হয়। একে বিনিয়োগের সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার বলা হয়।
রিস্ক টলারেন্স (Risk Tolerance) কী?
রিস্ক টলারেন্স হলো একজন বিনিয়োগকারী কতটা ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত, সেই ক্ষমতা ও মানসিকতা।
এটি নির্ভর করে বিনিয়োগকারীর লক্ষ্য, আয়ের উৎস, সময়সীমা এবং মোট বিনিয়োগের পরিমাণের ওপর।
পোর্টফোলিও রিব্যালেন্সিং (Rebalancing a
Portfolio) কী?
রিব্যালেন্সিং হলো আপনার বিনিয়োগের ভেতর বিভিন্ন সম্পদের (স্টক, বন্ড ইত্যাদি) অনুপাত পরিবর্তন করা, যাতে ঝুঁকি ও রিটার্ন আপনার পরিকল্পনা অনুযায়ী থাকে।
সাধারণত যেসব সম্পদ বেশি বাড়ে, সেগুলো কিছুটা বিক্রি করে এবং যেগুলো কমে যায় সেগুলো আবার কেনা হয়।
অ্যাক্টিভ ও প্যাসিভ ইনভেস্টিং-এর পার্থক্য কী?
অ্যাক্টিভ ইনভেস্টিং (Active
Investing): আলাদা আলাদা শেয়ার বা সম্পদ বেছে নিয়ে মার্কেটকে হারানোর চেষ্টা করা।
প্যাসিভ ইনভেস্টিং (Passive
Investing): মার্কেটের গড় রিটার্নের সাথে তাল মেলাতে ইনডেক্স ফান্ড বা ডাইভারসিফাইড ফান্ডে বিনিয়োগ করা।
অ্যাক্টিভ ইনভেস্টিং-এ খরচ বেশি এবং ঝুঁকিও বেশি। প্যাসিভ ইনভেস্টিং কম খরচে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগকারীদের জন্য ভালো হতে পারে।
বুল ট্র্যাপ (Bull Trap) কী?
যখন কোনো শেয়ার বা বাজার পড়তির মধ্যে থেকেও হঠাৎ ঊর্ধ্বমুখী মনে হয়, তখন অনেক বিনিয়োগকারী কেনা শুরু করেন। কিন্তু পরে বাজার আবার নিচে নেমে যায়, ফলে ক্রেতারা ফাঁদে পড়ে ক্ষতির মুখে পড়েন। একে বলা হয় বুল ট্র্যাপ।
বেয়ার ট্র্যাপ (Bear Trap) কী?
যখন কোনো শেয়ার বা বাজার নামার পথে মনে হয়, তখন অনেক বিনিয়োগকারী ধরে নেন দাম আরও পড়বে এবং বিক্রি শুরু করেন। কিন্তু হঠাৎ বাজার ঘুরে দাঁড়ালে বিক্রেতারা ক্ষতির ফাঁদে পড়েন। একে বলা হয় বেয়ার ট্র্যাপ।
শেয়ার কেনার আগে রিসার্চ কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিনিয়োগের আগে অবশ্যই কোম্পানির লাভ, ঋণ, এবং ভবিষ্যৎ বৃদ্ধির সম্ভাবনা যাচাই করতে হবে।
পি/ই রেশিও (P/E ratio), পূর্ববর্তী লাভের ইতিহাস, ত্রৈমাসিক ফলাফল, ম্যানেজমেন্টের দক্ষতা ইত্যাদি বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা উচিত।
যদি সম্ভব হয়, শেয়ারগুলোর টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস করেও সিদ্ধান্ত নেওয়া ভালো।
শুধু কোনো শেয়ারের দাম সস্তা বলেই তা কিনে নেওয়া একদমই উচিত নয়।
ডিসক্লেমার: এই ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য শুধুমাত্র শিক্ষামূলক এবং সাধারণ তথ্যের জন্য প্রদান করা হয়েছে। এটি কোনো আর্থিক পরামর্শ নয়। যেকোনো আর্থিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে একজন অনুমোদিত আর্থিক পরামর্শদাতার সঙ্গে পরামর্শ করুন।