আপনার উপার্জিত অর্থ বৃদ্ধি করার ১০টি প্রমাণিত উপায়: দীর্ঘমেয়াদে সম্পদ গড়ে তোলার সহজ কৌশল

0

 দীর্ঘ সময় (long-term) ধরে টাকাকে বাড়ানোর ১০টি ব্যবহারিক এবং শৃঙ্খলাপূর্ণ উপায় জানুন। এই গাইডটি খুচরো বিনিয়োগকারী সাধারণ মানুষের জন্য সম্পদ গড়ে তোলার একটি বাস্তব রোডম্যাপ।

সূচিপত্র


. ভূমিকা
২. আগে ভাগে শুরু করুন: চক্রবৃদ্ধি সুদের জাদু দেখুন

. বাজেট তৈরি করুন এবং সেটা অনুসরণ করুন

. ইমার্জেন্সি ফান্ড গড়ে তুলুন

. ইনডেক্স ফান্ডে বিনিয়োগ করুন

. পোর্টফোলিওতে বৈচিত্র আনুন

. উচ্চ সুদের ঋণ এড়িয়ে চলুন

. সঞ্চয় বিনিয়োগ স্বয়ংক্রিয় করুন

. আর্থিক শিক্ষা জরুরি (Financial Education)  জ্ঞান বাড়ান

১০. আয় থেকে পুনরায় নিয়মিত বিনিয়োগ করুন

১১. ধৈর্য ধরুন এবং শৃঙ্খলা মেনে চলুন

১২. চুড়ান্ত মতামত


ভূমিকা :


প্রতিটি মানুষ  চান তাদের কষ্টার্জিত অর্থ বাড়ুক। কিন্তু সঠিক পথে নিয়মিত চেষ্টা না করলে তা সম্ভব হয় না। ধনী হওয়া কোনও ম্যাজিক নয়, এটা সময় অভ্যাসের বিষয়।


এই লেখাটি কল্পনার উপর নয়, বাস্তব অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে তৈরি। যদি আপনি এই ১০টি বিষয় নিয়মিত মেনে চলেন, তাহলে আপনার অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ পাল্টে যেতে বাধ্য।


আগে ভাগে শুরু করুন :


চক্রবৃদ্ধি সুদের জাদু দেখুন যত তাড়াতাড়ি আপনি সঞ্চয় বা বিনিয়োগ শুরু করবেন, আপনার লাভ তত বেশি হবে। কারণ চক্রবৃদ্ধি সুদ সময়ের সাথে আপনার টাকাকে কয়েকগুন বাড়িয়ে দেয়।


ধরুন আপনি প্রতি মাসে ১০০০ টাকা বিনিয়োগ করছেন। যদি তা আপনি ২০ বছর চালিয়ে যান এবং প্রতি বছর ১২% রিটার্ন পান, তাহলে তা কয়েক লক্ষ টাকায় পৌঁছে যাবে। কিন্তু আপনি যদি দেরিতে শুরু করেন, তাহলে একই লক্ষ্য অর্জনে অনেক বেশি টাকা দরকার হবে।


বাজেট তৈরি করুন এবং সেটা অনুসরণ করুন :


বাজেট মানে হলো আপনার আয় খরচের একটি পরিষ্কার পরিকল্পনা। এটা আপনাকে নিয়ন্ত্রণে থাকতে সাহায্য করে।


প্রথমেই নিজের মাসিক আয় লিখে ফেলুন। তারপর প্রয়োজনীয় খরচ (বাড়ি ভাড়া, বাজার, বিদ্যুৎ বিল) এবং অপ্রয়োজনীয় খরচ (খাওয়া-দাওয়া, ঘোরাঘুরি) আলাদা করুন। প্রথমেই সঞ্চয় নির্দিষ্ট করুন, তারপর খরচ করুন।


ইমার্জেন্সি ফান্ড গড়ে তুলুন :


জীবনে হঠাৎ করে অনেক কিছুই ঘটতে পারেহাসপাতালে ভর্তি, চাকরি চলে যাওয়া, ইত্যাদি। এমন সময়ে আপনার মূল সঞ্চয় যেন ভেঙে না পড়ে, তার জন্য জরুরি ফান্ড থাকা দরকার।


এই ফান্ড ideally আপনার মাসের খরচের সমান হওয়া উচিত। এটি আলাদা একাউন্টে রাখুন এবং শুধুমাত্র জরুরি প্রয়োজন মোকাবিলায়  ব্যবহার করুন।


ইনডেক্স ফান্ডে বিনিয়োগ করুন :


আপনি যদি শেয়ার বাজারের বিশেষজ্ঞ না হন, তাহলেও ইনডেক্স ফান্ডে বিনিয়োগ একটি সহজ এবং কার্যকর উপায়।


এগুলি দেশের শীর্ষ কোম্পানিগুলোর পারফরম্যান্স ট্র্যাক করে। এতে আপনি স্বল্প খরচে দীর্ঘমেয়াদী ভালো রিটার্ন পেতে পারেন। প্রতিমাসে ছোট পরিমাণ(SIP) করে ইনভেস্ট করুন এবং ধৈর্য রাখুন।


পোর্টফোলিওতে বৈচিত্র আনুন :


এক ঝুড়িতে সব ডিম রাখলে বিপদ বেশি। অর্থাৎ, আপনার সব টাকা একখানে মানে একটা asset class বিনিয়োগ করবেন না।


শেয়ার, স্বর্ণ, ফিক্সড ডিপোজিট, মিউচুয়াল ফান্ডবিভিন্ন জায়গায় বিনিয়োগ করুন। এতে কোনও একটি ক্ষেত্র খারাপ করলেও অন্যটি আপনাকে টিকিয়ে রাখবে।


উচ্চ সুদের ঋণ এড়িয়ে চলুন :


ক্রেডিট কার্ডের ঋণ, পার্সোনাল লোন বা এমআই ইত্যাদি উচ্চ সুদের ঋণ যতদূর সম্ভব এড়িয়ে চলুন।


আপনি যদি বছরে ২৪% সুদে ঋণ নিয়ে থাকেন, আর আপনার বিনিয়োগ রিটার্ন হয় ১২%, তাহলে আপনি টাকাই হারাচ্ছেন। তাই আগে ঋণ মিটিয়ে ফেলুন, তারপর বিনিয়োগ করুন।


সঞ্চয় বিনিয়োগ স্বয়ংক্রিয় করুন (Automated) :


যত কম ভাববেন, তত বেশি সঞ্চয় হবে। নিজের ব্যাংক থেকে প্রতিমাসে অটোমেটিক কেটে নেওয়ার ব্যবস্থা করুন—SIP, RD বা যেকোনো বিনিয়োগে।


এর ফলে আপনি খরচ করার আগেই সঞ্চয় করে ফেলবেন। এটি একটি দারুণ অভ্যাস যা আপনি না চাইলেও আপনার টাকা গড়ে তুলবে।


আর্থিক শিক্ষা জরুরি (Financial Education)  জ্ঞান বাড়ান :


পয়সা তখনই বাড়ে, যখন আপনি জানেন কিভাবে সেটি পরিচালনা করতে হয়।
আপনার ইনভেস্টমেন্ট অপশন, কর ছাড়, মার্কেটের আচরণএসব জানলে আপনি ভুল কম করবেন।


প্রতিদিন একটু করে শিখুনভিডিও, ব্লগ, বই বা ট্রাস্টেড সোর্স থেকে। যত জ্ঞান বাড়বে, তত নিরাপদ এবং লাভজনক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।


আয় থেকে পুনরায় নিয়মিত বিনিয়োগ করুন :


আপনার ডিভিডেন্ড, ইন্টারেস্ট, লাভএসব যদি খরচ না করে আবার বিনিয়োগ করেন, তাহলে আপনার অর্থ দ্রুত বেড়ে যাবে।


এটাই চক্রবৃদ্ধি লাভের আসল শক্তি। প্রথমে টাকা টাকা আনে, তারপর সেই টাকা আবার টাকা আনে। ফলে, সময়ের সাথে আপনার সম্পদ এক্সপোনেনশিয়ালি বাড়তে থাকে।


ধৈর্য ধরুন এবং শৃঙ্খলা মেনে চলুন :


ধৈর্য না থাকলে আপনি মাঝপথেই হাল ছেড়ে দেবেন। কিন্তু সেখানেই অনেকেই ভুল করেন।


সপ্তাহ বা মাস নয়, বরং বছর এবং দশকের পরিকল্পনা করুন। মার্কেট নামলেও ভয় পাবেন না। শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে সঞ্চয় বিনিয়োগ চালিয়ে যান। ধীরে ধীরে ফল পাবেনই। 

 

চুড়ান্ত মতামত :

 

এই দশটি উপায় কোনো গোপন রহস্য নয়এগুলো বাস্তব সত্য, যা বেশিরভাগ মানুষ অবহেলা করে চলে। কিন্তু যদি আপনি এগুলো ধৈর্য সহকারে এবং নিয়মিতভাবে মেনে চলেন, তাহলে আপনার আর্থিক জীবন ধীরে ধীরে বদলে যাবে।


সম্পদ একদিনে গড়ে ওঠে না। এটি সময়, ধৈর্য এবং ধারাবাহিক চেষ্টার মাধ্যমে ধাপে ধাপে তৈরি হয়। আজকেই হোক আপনার প্রথম দিন। ছোট থেকে শুরু করুন, দীর্ঘমেয়াদি চিন্তা করুন, আর থেমে না থেকে এগিয়ে যান।


ডিসক্লেমার :MoneyWiseMind  প্রদত্ত তথ্য কেবল শিক্ষামূলক  তথ্যগত উদ্দেশ্যে ব্যবহারযোগ্য এটি কোনো আর্থিক পরামর্শ নয়তাই  তথ্যের উপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয় কোনো আর্থিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই একজন অনুমোদিত আর্থিক পরামর্শদাতার সঙ্গে পরামর্শ করুন।


Related Article:


কেন বিনিয়োগ জরুরি ? কোথায় বিনিয়োগ করবেন ?

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)